ভয়ংকর সুন্দর

একবার পার্বত্য চট্টগ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। বন আর জঙ্গলের মাঝ দিয়ে আঁকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু পথ। একা পথ চললে কেমন যেন একটা নির্জনতা গ্রাস করে। তো একবার একাই ঐ পথ ধরে হাঁটছিলাম। চারিদিক নিরব। সূর্যের আলো এই আসে আবার এই আসে না। পাখির মিষ্টি ডাক বিরামহীন ভাবে কানে না শোনা গেলেও চোখকে কিন্তু কোন ভাবেই বিশ্রাম দিতে পারছিলাম না। আজ হলটা কি! চারিদিকে লাল নীল এত রং! এত ফুল! পলাশ, শিমুল চিনলেও আর কতগুলোর নাম জানি না। দেখে যেন মনে হয় কতগুলো বিষাক্ত। মনে পড়ল এখন বসন্ত কাল। বসন্তের সাজে সেজেছে প্রকৃতি। যত হেঁটে চলেছি বনের গভীরে, নীরবতা যেন আরও গভীরতর হচ্ছে। এত নীরবতা যে শুকনো পাতার মরমর ধ্বনিগুলো খুব বেশি কানে আসছিলো। মনে হচ্ছিল তারা যেন আমার সাথে কথা বলছে। আমি যেন কেমন একটু ভয়ই পেয়ে গেলাম। “ভয়ংকর সুন্দর” কথাটাকে এই প্রথম উপলব্ধি করলাম। মনে মনে ভাবলাম, ইস! এই মুহূর্তে যদি সে আমার পাশে থাকত! কিন্তু পর মুহূর্তেই ভাবলাম না; তাহলে এভাবে অপরূপ প্রকৃতির সাথে ভয়ংকর সুন্দও মুহূর্তগুলো কিভাবে কাটাতাম? দুজনের কথার স্রোতে পাতার মরমর ধ্বনিটুকু কি ম্লান হয়ে যেত না? ফুলের পাপড়িগুলো কে কি তখন অপমানে মলিন দেখাতো না? কে সুন্দর তা বিচার করার জন্য আমাকে বিচারকের আসনে বসতে হত! আমি আমার এ সুন্দও মুহূর্ত গুলো হারিয়ে ফেলতাম। উফ! কি অসহ্য হত সেই মুহূর্ত। কাজেই অন্য সব চিন্তা বাদ দিয়ে আমি আরও গভীওে হেঁটে চললাম। ঐ মুহূর্তে আমার আর প্রকৃতির মাঝে অন্য কারও উপস্থিতি ছিল অবাঞ্ছিত।