স্বকীয়তা

ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিলাম। দু’পাশে অবারিত সবুজ। দেখতে দেখতে চোখ জুড়িয়ে এল। লম্বা লম্বা গাছের সারি। কিন্তু এত সুন্দরের মাঝেও চোখদুটো যেন খোলা থাকতে চাইছিল না। তন্দ্রা আসছিল। এর আগেও অবশ্য একবার আমি সিলেট গিয়েছি। তখন অবশ্য এরকম হয়নি। চোখ খুলে দেখেছিলাম দুপাশের সৌন্দর্য। মনে এখনো দাগ কেটে আছে। তাই হয়ত সেকেন্ড টাইম দেখার আগ্রহটা একটু কম। কিন্তু বসে বসে ঝিমুলে কি হবে, এর মাঝেও যতটুকু পারছি চোখদুটো ঐ সবুজের দিকে ব্যস্ত রাখছি। এরই মধ্যে মাথাটাকে একটু এলিয়ে দিলাম। সত্যিই! কি সুন্দর এই বাংলাদেশ। উঁচু উঁচু পাহাড়। পুরোটা সবুজে ঢাকা। যেন সবুজের চাদও মুড়িয়ে আছে। তারই মাঝে মাঝে পাহাড়ের বুক চিঁড়ে দু তিনটে সাদা ঝরণা। দৃশ্যটা যে কি মনোরম, তা একমাত্র যে দেখেছে সেই ভাবতে পারে। “চারিদিকে সবুজের সমারোহ। মাঝ দিয়ে দু’তিনটি নদী বয়ে যাচ্ছে।” মনে করেন এই দৃশ্যটাই যদি আপনার সামনে কাত করে তুলে ধরা হয় তাহলে যে দৃশ্যটা হবে সেটা। হঠাৎ একটা মৃদু ধাক্কা খেলাম। তন্দ্রাটা ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখি কোথায় সবুজ! ট্রেন এখন ব্রীজের উপরে। অনেক নিচে পানি। দুপাশে কিছুই নেই। তার মানে আমি এতক্ষণ ঘুমুচ্ছিলাম। ঘুমের মাঝে এত কিছু দেখছিলাম! মানে স্বপ্ন! তাহলে কি আমার মনের মাঝেও এরকম একটা কল্পনার সবুজ জগৎ আছে যেখানে সবুজ পাহাড়ের মাঝে রয়েছে সাদা ঝরণা। আমি যদি এখন পাতাল ট্রেনে চড়ে ৫১০ কি.মি. বেগে টোকিও থেকে নাগাসাকি যেতাম তাহলেও কি ঝিমুতে ঝিমুতে একই দৃশ্য দেখতাম। হয়ত দেখতাম। আর হয়ত এ কারণেই আমি সেখানেও হতাম বাংলাদেশী। আর পাতাল ট্রেনে আমার পাশের সিটে বসা বন্ধুটি হত জাপানী। ব্যাপারটি বেশ ভাবনার; কি বলেন।