মিরাজ : আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার বাস্তব উদাহরণ

( এ লেখাটি অনেক আগের। তাই “স্কুল কলেজে থাকতে যা লিখেছিলাম” অংশে দিতে চেয়েছিলাম। ধার্মিক কারো ধর্মীয় চেতনা বা বৈজ্ঞানিক কারো যুক্তিবাদী চিন্তায় আঘাত করে থাকলে দুঃখিত 🙂 )

আমরা এখানে মিরাজের ঘটনাকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করব। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের দুটি বিশেষ রূপ রয়েছে। একটি হচ্ছে বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব (Special theory of relativity) অপরটি সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব (General theory of relativity)। আমরা এখানে বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের সাহায্যে মিরাজকে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করব। আমরা দুইভাবে অগ্রসর হব। একটি হল আমরা তত্ত্বগতভাবে (সূত্রের সাহায্যে) অগ্রসর হব। অপরটি হল, বাস্তব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করব এবং শেষে লক্ষ্য করব সূত্র বা তত্ত্বলব্ধ ফলাফল বাস-ব ঘটনার সাথে মিলছে কি না বা সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না।

এখন মিরাজের ঘটনাকে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যার জন্য আমরা দুটি জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর অবতারণা করব যেখানে একটি অপরটি সাপেক্ষে ধ্রুব আপেক্ষিক বেগে গতিশীল। এর একটি হচ্ছে আমাদের পৃথিবী: কাঠামো E (Earth) । অপরটি হচ্ছে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স) এর বাহন বোরাক: কাঠামো ই। ধরা যাক, B কাঠামো E কাঠামো সাপেক্ষে v বেগে গতিশীল। অর্থাৎ মহানবী (স) বোরাকরে পিঠে v বেগে গতিশীল ছিলেন।

এখন আমরা আপেক্ষিকতার কাল দীর্ঘায়ন সূত্র থেকে জানি,

এখানে, v = গতিশীল কাঠামোর বেগ
c =  আলোর বেগ
t = স্থির কাঠামোতে অবস্থিত একজন পর্যবেক্ষক কর্তৃক গতিশীল কাঠামোতে কোন ঘটনা ঘটার   পরিমাপকৃত সময়।
to = গতিশীল কাঠামোতে অবস্থিত একজন পর্যবেক্ষক কর্তৃক ঐ ঘটনা ঘটার (গতিশীল কাঠামোতেই ঘটা) পরিমাপকৃত সময়।

অর্থাৎ, সহজ করে বললে একটি ঘটনা গতিশীল কাঠামোতে ঘটেছে। স্থির কাঠামোতে একজন পর্যবেক্ষক ঐ ঘটনা ঘটার মধ্যবর্তী সময় পরিমাপ করলেন t। অর্থাৎ ঘটনা ঘটার কাঠামোটি ঐ কাঠামো সাপেক্ষে গতিশীল। আবার গতিশীল কাঠামোতে অবস্থিত একজন পর্যবেক্ষক (ঘটনাটি গতিশীল কাঠামোতেই ঘটেছে) ঐ সময় মাপলেন to। অর্থাৎ ঘটনা ঘটার কাঠামোটি ঐ কাঠামো সাপেক্ষে স্থির।

অর্থাৎ, ঘটনা ঘটার সিস্টেমটি যে কাঠামো সাপেক্ষে স্থির, সেই কাঠামোতে পরিমাপকৃত সময় to

ঘটনা ঘটার সিস্টেমটি যে কাঠামো সাপেক্ষে গতিশীল সেই কাঠামোতে পরিমাপকৃত সময় t

এখন, আমরা জানি, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স) মিরাজে যাওয়ার আগে যে অবস্থান থেকে ওযুর পানি গড়িয়ে পড়ছে দেখে গিয়েছিলেন, মিরাজ থেকে এসে দেখেছিলেন ওযুর পানি ঠিক সেখান থেকেই গড়িয়ে পড়ছে। অর্থাৎ ওযুর পানির অবস্থান স্থির কাঠামোতে (E কাঠামো) এবং তিনি যে সময় ওযুর পানির অবস্থান দেখে গিয়েছিলেন, সে সময় তিনি ছিলেন স্থির কাঠামোতে এবং শেষ অবস্থান দেখার সময়ও তিনি ছিলেন স্থির কাঠামোতে।১  এটাই হচ্ছে মহান আল্লাহ্‌র একটি সুক্ষ কৌশল যা পরে ব্যাখ্যা করা হবে।) অর্থাৎ স্থির কাঠামোতে  অবস্থানরত পর্যবেক্ষক মিরাজের ঘটনা ঘটার মধ্যবর্তী সময় পরিমাপ করলেন  (ইনফিনিটি বা অসীম)।  এখানে  কেন বললাম ব্যাখ্যা করা যাক। ধরা যাক, ওযুর পানি a থেকে b বিন্দুতে ( ) গড়িয়ে পড়বে। a থেকে b তে যাওয়ার সময় পানি বিন্দু ক্ষুদ্র   দূরত্ব অতিক্রম করতে  (অসীম) সময় নিয়েছিল বলেই পানি a বিন্দুতেই রয়ে গেছে। b তে যায়নি। (এখানে পানি তো গড়িয়েই পড়েনি, সুতরাং অনেকেই মধ্যবর্তী সময় ০ (শূন্য) মনে করবেন। কিন্তু সে ধারণা ভুল হবে। কারণ a থেকে b তে যেতে পানির শূন্য সময় লাগলে (কাল মুহূর্ত লাগেনি) পর মুহূর্তেই পানি বিন্দুকে a বিন্দুতে দেখা যেত, যা ঘটেনি।)

সুতরাং,  এবং

এখন,

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, বোরাকের বেগ ছিল আলোর বেগ। অর্থাৎ সর্বোচ্চ। কোন বস্তুর বেগ আলোর বেগ হলেই সময়কে সম্পূর্ণরূপে অতিক্রম করা সম্ভব। এবং আমরা জানি, বোরাকের বেগ ছিল সর্বোচ্চ। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, তত্বগত ফলাফল, বাব ফলাফলের সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। বরং বাস্তব ফলাফলকেই জোরালো করে।

এবার কিছু বাস্তব ঘটনার সাথে তত্বগত ঘটনার গভীর মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করার যাক।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, মহানবী (স) নূরের তৈরি। কিন্তু এও তো বলা আছে যে, আল্লাহ মানুষকে মাটি থেকেই তৈরি করেছেন আর মহানবী (স) শরীরগত ভাবে সাধারণ মানুষই ছিলেন। এই দুইটি কথা আমাদেরকে আধুনিক বিজ্ঞানের একটি বড় বিতর্ককেই স্মরণ করিয়ে দেয়। আধুনিক বিজ্ঞান বলে, আলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তিগুচ্ছ বা প্যাকেট বা কোয়ান্টাম আকাওে বিচ্ছিন্নভাবে নির্গত হয়। এটি হচ্ছে আলোর কুা রূপ। আবার আলো তাড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গাকারেও নির্গত হয়। এটি হচ্ছে আলোর তরঙ্গ রূপ। একই সাথে কুা, তরঙ্গ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অসম্ভব হলেও আপনি আলোর কিছু চরিত্র যেমন তরঙ্গ তত্ত¡ ছাড়া ব্যাখ্যা করতে পারবেন না, তেমনি কোয়ান্টাম তত্ত¡ ছাড়াও আবার কিছু চরিত্র ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। সেজন্য বিজ্ঞানীরা শেষ পর্যš— বললেন, আলো কখনো কুা আবার কখনো তরঙ্গ রূপে আচরণ করে। তেমনি কুরআনে মহানবী (স) নূরের তৈরি বলার মানে এই নয় যে, তিনি মাটির তৈরি নন। সেই হিসেবে আমরা, আপনি, এমনকি পৃথিবীর সবকিছুই নূরের তৈরি। কারণ কুরআন বলেছে, মহানবী (স) এর নূও থেকেই সবকিছুর সৃষ্টি। অর্থাৎ বিজ্ঞান যেমন বলছে আলো কখনো কুা কখনো তরঙ্গ, তেমনি কুরআন পৃথিবীর সবকিছুকে কখনো কুা (মাটির তৈরি বা অ¯ি—ত্বশীল) আবার কখনো নূও বলছে (সবকিছু তাঁর নূও থেকে তৈরি)। বিজ্ঞান সেই চৌদ্দশ বছর আগের কথাই বলছে এভাবে, ভর ও শক্তি অভিন্ন এবং তাদেও মধ্যে স¤পর্ক ঊ = সপ২।

কুরআনের কথাকে আরও এশবার টেনে এনে বলা যায়, মহানবী (স) কে নূও বা আলোর সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ বলা হল কেন? আরও অনেক উৎকর্ষপূর্ণ জিনিস তো ছিল। তবুও কুরআনে বলা হল, মহানবী (স) নূরের তৈরি এবং সম¯— সৃষ্টিজগত তাঁর নূও থেকেই সৃষ্টি। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতিটি জিনিসের ভর রূপ (দেহ রূপ) ও শক্তি রূপ (নূও রূপ) রয়েছে যা আবার আইনস্টাইনের ঊ = সপ২ সমীকরণও বলে। এ কারণেই তিনি নূরের গতিতে (আলোর গতিতে) ভ্রমণ করেছেন। আবার সূত্র বলছে (এই মাত্র আমরা প্রমাণ করলাম) মহানবী (স) আলোর গতিতে ভ্রমণ করেছিলেন। অর্থাৎ তত্ত¡গত বা সূত্রের সাহায্যে অগ্রসর হয়ে আমরা ফল পেলাম, তিনি আলোর গতিতে ছিলেন। আবার বা¯—ব ঘঁনা পর্যলোচনা করেও ফল পেলাম তিনি আলোর গতিতে ছিলেন। মিরাজের এই আশ্চর্য সুন্দও বা¯—ব ঘঁনা কিভাবে বিজ্ঞান ও কুরআনকে এক সূত্রে গেঁথে দিচ্ছে, আমার মনে হয় সচেতন পাঠক মাত্রই তা বুঝতে পারছেন।

আবার “বোরাক” শব্দের অর্থ “বিদ্যুৎ”। গড়ফবৎহ চযুংরপং বলে আলো হচ্ছে বিদ্যুৎ চৌম্বক তরঙ্গ। কোয়ান্টাম তত্ত¡ বলে আলোক শক্তি প্যাকেট, ফোটন হচ্ছে ইলেকট্রনেরই বিশেষ রূপ (ফটো ইলেকট্রন)। এখন প্রশ্ন হল, মহানবী (স) এর বাহনকে বোরাক বা বিদ্যুৎই কেন বলা হল? ঈক্সিখরাজ ঘোড়া, হাওয়াই গালিচা আরও কত কিছু হতে পারত। এ থেকেই বোঝা যায় কুরআন কতখানি বিজ্ঞানময়। প্রতিটি ব্যাপাওে সে কোন প্রশ্ন রাখেনি। কুরআন বলেছে নূরের সাথে বোরাকের স¤পর্কেও কথা। বিজ্ঞান সেখানে সেই উক্তিরই প্রতিধ্বনি করেছে ফোটনের সাথে ইলেকট্রনের স¤পর্কেও কথা বলে।

Leave a Reply