মানবী নয়, প্রকৃতি

সামনে এগিয়ে চলছিলাম। এত সুন্দর জায়গা আমি জীবনে দেখিনি! পাশে পাশে অজস্র গাছের সারি। সামনের পথটা বেশ উঁচু হয়ে গিয়েছে। শুকনো পাতার মচমচ শব্দটা বাদ দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে শোনা যাচ্ছে অবিরাম ঝর্ণাধারার মন নাচানো শব্দ। তার শব্দটাও যেন ঠান্ডা পানির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে দেহ মনে। ওদিকটায় বেশ কয়েকটা পাখির বিচিত্র শব্দ কানে আসছে। ঝোপে ঝাড়ে ফুটে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ি লাল নীল ফুল। এই জনহীন অরণ্যে ভয় নামের বস্তুটিকে দূরে ঠেলে দিয়ে কি যেন এক অনাবিল প্রশান্তি মনে বিরাজ করছিল।এখানে আমি মুক্ত,স্বাধীন। এখানে নেই নিজেকে অপরের সামনে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যস-তা। এখানে নেই, নিজেকে অপরের সামনে ভাবগম্ভীর বা উৎফুল্ল করে তোলার প্রয়োজনীয়তা। কারণ, এখানে আমার একমাত্র প্রতিপক্ষ প্রকৃতি। কেমন যেন একটা নিস-ব্ধ পরিবেশ। প্রকৃতির মোহনীয়তা যেন এখানে চাঞ্চল্য ছেড়ে সন্ন্যাসীনীর রূপ ধরেছে। শত সহস্র দন্ডায়মান গাছগুলো যেন তার রূপের মহিমা ঘোষণা করছে। সে অপরূপা হয়েও আত্মরক্ষায় সবলীয়ান। তার লাল নীল ফুলের গাছগুলোর নিচেই রয়েছে অজস্র কাঁটার ঝোঁপ। তার কঠিন পাথরগুলোর গা বেয়েই বয়ে চলছে স্বচ্ছ পানির অপরূপ ঝর্ণা। তার গাছগুলোর কোমল পাতার নিচেই রয়েছে ইস্পাতরূপ কান্ড।

আর একটু এগিয়ে গেলাম। পাহাড়ের নীলাভ গা বেয়ে সশব্দে নেমে আসছে বড় রবমের একটি ঝর্ণা। মনে হয় যেন এ জায়গাটিই এই অপরূপ লীলাভূমির রাজধানী। প্রকৃতি এখানে কৃপণতা প্রকাশে অত্যন- কৃপণ। অরণ্যের যে টুকরো টুকরো রূপগুলো পথের মাঝে এক এক জায়গায় দেখেছিলাম, তার সমস-ই যেন একসাথে এ জায়গাটিতে বিদ্যমান। সূর্যের আলো এদিকটায় তেমন আসছে না। সূর্যের আলোকে উপেক্ষা করে নিজেদের রূপের রোশনাই জ্বালানোই যেন গাছগুলোর উদ্দেশ্য।

ঝর্ণার স্বচ্ছ পানির আবরণ ভেদ করে বেড়িয়ে আসছে নীলাভ পাথর গাত্র। কোথা থেকে যেন দুই একটা হলুদ ফুল বয়ে চলছে পানির পথ ধরে। তারই মাঝে আবার একটা গাছ মাথা ঝুকিয়ে ওপারে যাওয়ার রাস্তা  তৈরি করেছে। ………

অন্য কারও মত নিজের প্রশংসা না করে আমি বলতে পাচ্ছি না যে, আমার এই লেখা কারও মনে ছবি আঁকার বাসনা বা কবিতা লেখার ইচ্ছা সৃষ্টি করবে না।

Leave a Reply